গোপালগঞ্জে ব্যক্তি উদ্যোগে নিজ ইউনিয়নের প্রায় ২০০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জে কে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের স্বত্যাধিকারী মোঃ কামরুজ্জামান সিকদার কামাল। গ্রামের দরিদ্র ও বেকার যুবকদের কথা চিন্তা করে নিজ ইউনিয়নের ডেমাকইড় গ্রামে গড়ে তুলেছেন প্লাস্টিক পাইপ, পানির ফিলটার, পানির ট্যাংক, মিনারেল ওয়াটার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল টিন তৈরীর কারখানা। এই কারখানায় কাজ করছে করপাড়া ইউনিয়নসহ গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় দুই হাজার মানুষ। গোপালগঞ্জবাসী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
জে কে পলিমারের স্বত্যাধিকারী মোঃ কামরুজ্জামান সিকদার সাংবাদিকদের বলেন,করপাড়া ইউনিয়নের একটি নিম্ম জলাভূমি এলাকা হিসেবে পরিচিত ডেমাকইড় গ্রাম। বিল বেষ্ঠিত এই গ্রামে বিগত পাঁচ বছর আগে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ডেমাকইড় গ্রামে গড়ে তোলা হয় জে কে পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানাটি। তখন একটি সেডে শুধু পাইপ তৈরী হতো। ধীরে ধীরে এর পরিধি আরো বাড়ানো হয়। একসময় এক ফসলের উপর নির্ভরশীল ছিল এখানকার মানুষ। শুকনো মৌসুমে ধানচাষ আর বর্ষা মৌসুমে বিলে মাছ শিকার ও শাপলা শালুক কুড়িয়ে চলতো এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা।
বিগত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দত্তডাঙ্গা থেকে গান্ধিয়াশুর পর্যন্ত একটি পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়। এই সড়কটিকে পুঁজি করে করপাড়া ইউনিয়নের ডেমাকইড় গ্রামে আমি প্লাস্টিক পাইপ কারখান গড়ে তুলি। তখন মাত্র একটি মেশিন ছিল। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সাইজের পাইপ, পানির ট্যাংক, পানির ফিলটার,সেনিটেশন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের এলবো,মিনারেল ওয়াটার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল টিন তৈরীর কারখানা গড়ে তোলা হয়। তখন থেকে কারখানাটিতে প্রথমে নিজ গ্রাম পরে ইউনিয়নসহ জেলার প্রায় দুইহাজার দরিদ্র ও বেকার যুবকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এখন তৈরী পোষাকের জন্য একটি সেড নির্মাণ কাজ চলছে। এটি চালু হলে আরো প্রায় ৫০০ নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃস্টি হবে।ফলে অঞ্চলটি অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হবে।
করপাড়া ইউনিয়নের বলাকইড় গ্রামের মোঃ কাবির মিয়া বলেন,আমি আগে ঢাকায় রিক্সা চালাতাম। রিক্সা চালিয়ে যা আয় রোজগার হতো তা দিয়ে নিজের খরচ চালিয়ে বাড়িতে সামন্য কিছু টাকা পাঠাতে পারতাম। পরে শুনলাম আমাদের এলাকায় কারখানা হয়েছে। এলাকার কারখান থাকতে আমি বাইরে কাজ করবো কেন? এমন প্রশ্ন নিজের ভিতর তৈরী হলে যোগাযোগ করলাম মালিকের সঙ্গে। দেখা করে এলাকার ছেলে বলায় আমাকে কাজের সুযোগ দিলেন। সেই থেকে আমি কাজ করছি। বাড়ি থেকে যে বেতন পাচ্ছি তাতে পরিবার পরিজন নিয়ে আমার ভালোই চলছে।
বলাকইড় গ্রামের বাসু সিকদার, তাড়গ্রামের মহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রামের মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এতে আমাদের খুব উপকার হয়েছে। গ্রাম বা ইউনিয়নের মানুষ এখানে কাজ করে আয় উপার্জন করছে। অজপাড়াগা এখন উন্নত হতে শুরু করেছে। আমরা কাজ করে মা-বাবা ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালোই আছি। এইজন্য মালিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
উত্তর করপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ মহাসিন দাড়িয়া বলেন, এলাকার শ্রমজীবি মানুষ তাদের প্রতিদিনের কাজ খুঁজে পেয়েছে। বাড়িতে থেকে সকালে কাজে এসে আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছে। মাস শেষে পাচ্ছেন ভালো বেতন। মা বাবা আর পরিবার পরিজন নিয়ে উন্নত জীবনমান করছে। এর ফলে এলাকাটি অর্থনৈতিক ভাবে অগ্রসর হয়েছে। আর আমারা যারা ব্যবসায়ী আছি তাদেরও বেচা বিক্রি আগের থেকে বেড়েছে। সকল শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যে স্বচ্ছলতা দেখা দিয়েছে। সমাজে আরো যারা ধ্বনী রয়েছেন তাদেরও এলাকায় প্রতিষ্ঠান করে মানুষের উপকারে আশা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
কোম্পানীর মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ শহরের বাসিন্দা মোঃ কুতুবুদ্দিন ও করপাড়া ইউনিয়নের বনগ্রামের বাসিন্দা ও কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন,এই কারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে গ্রামবাসী বা ইউনিয়নবাসীদের চাকরি দেয়া হয়ে থাকে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের কাজ দেয়া হয়। তাতে কিছুটা হলেও গোপালগঞ্জবাসীর বেকারত্ব কমেছে। মাসের প্রথম সপ্তাহে সবাই বেতন হাতে পাচ্ছে। গ্রামের মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য করে ভালো আছেন। এলাকার অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে। এই মহতি উদ্যোগের জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ কামরুজ্জান সিকদার কামাল সাহেবকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
জেলা আওয়মীলীগ সভাপতি মাহাবুব আলী খান বলেন, জে কে পলিমার খুব অল্প সময়ে বেশ উন্নত হয়েছে। মোঃ কামরুজ্জান সিকদার কামাল এলাকায় প্রতিষ্ঠান করে কর্মসংস্থান সৃস্টি করেছে। বেকার যুবকরা কাজ খুজে পেয়েছে। এই উদ্যোক্তাকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।